সোমবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০১৬

জীবন তার প্রয়োজনে বড় হয়

জীবন তার প্রয়োজনে বড় হয়
- - - - - - - - - - - - - - - -
এই ত সে দিনের কথা -
মায়ের হাতে গোসল,মায়ের হাতেই খাবার। সেই হাতেই আদর শাসন আবার সেই হাতেই পথ প্রদর্শন।
পান থেকে চুন খসলেই তুলকালাম কাণ্ড বেঁধে কত দাবী আবদার যখন- তখন। মায়ের হাতেই আদর শাসন।
সেই শৈশব এখনো রোদ্র উজ্জ্বল বালুর মতন চোখের বিভা হয়ে আছে, দেহ বস্ত্রে এখনো লেপটে আছে
টোকা দিলেই উড়বে বালুকাময় শৈশব।

জীবন তার প্রয়োজনে বড় হয়,
মানুষ নিজেই বুঝতে পারে না তারই শৈশব তারই যৌবন-তাকে তাড়া করতে করতে অদ্ভুত শূণ্যতার দিকে নিয়ে যায় ।
তবু আমি কোনদিনও হারাতে দিইনি আমার সেই স্মৃতিময় জীবন, সেই তেজদীপ্ত স্পন্দন!


জীবনের কাছে আমি কখনোই দূষ্পাপ্য কিছু চাইনি, সুযোগ ছিল
আর দশ জন মানুষের মতন প্রলুব্ধতার মাঝে মত্ত হয়ে অট্টালিকা সমান প্রতিপত্তি অর্জন করার।
অসংখ্য প থ চেনা-জানা , অসংখ্য সুযোগ অসংখ্য বার উপেক্ষা করে আমি আমার মতন
আপন সত্ত্বায় বিলীন হয়েছি কেবল
নিজের মধ্যে নিজেকে খুঁজেছি
রাতের পর তার , দিনের পর দিন বছরের পর বছর আত্মিক ধ্যানে আত্ম সাধনে নিজের সঙ্গে নিজে
লড়েছি, মনের সেই জায়গায় যাওয়াটাই আমার মতে বেশি প্রয়োজন। আমি জানি যে আমি মাঠে ঘাটে যুদ্ধ করতে পারব না।
এ পথটা সমাধানের পথ নয় , শান্তির নয়, মহা মানবের নয়, প্রেমিকের নয়;
কাজেই আমি তার মধ্যে যাব না। তাই আমি দৈন্যদশা, ঈর্ষা বা ঘৃণা ও মারামারি হানাহানি করতে পারব না দেখতে পারব না।
তার জন্যই আমার সংগ্রাম। এই শান্তির কথা বলাটাও একটা সংগ্রাম মনে করেছি চিরকাল।
আমি আজ মানুষের অনাবিল ভালবাসা পাই, আমার বিপদের দিনে অনেকে বন্ধুর হাতও বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।এসব কন দিন পাওয়া হত না, যদি
অন্য সবার মত আমিও নিজের সত্তাকে অবমাননা করতাম,
ভালবাসার সাথে বেঈমানি করতাম , যদি মুনাফেকি করে কাউকে খাট করতাম।।

মানুষ তো বটেই! পৃথিবীর প্রতিটি জিব জন্তু, কীট পতঙ্গের ও আত্মা আছে, প্রেম আছে, ভালোবাসা আছে, স্বপ্ন আর আদর্শ আছে;
প্রতিটি ধূলিকণার ভেতরেও আছে আত্মা, তাই পাথর হয়ত বা কেবল পাথরই কিন্তু এখানে সে মানুষের প্রতিভূ।
আমি দেখেছি সেই বস্তুটির ওপরে যখন আলো এসে পড়েছে তখন মনে হয়েছ সেই পাথর ও উত্তরণের দিকে যাত্রার চেষ্টা করেছে,
আমি সেই পাথর থেকে -
শিখেছি নিজের অন্তর কে কি করে ফুলের বাগিচা করতে হয়, কি করে চোখের জলে ক্ষান্ত করতে হয় তৃষ্ণার্ত হৃদয়।

এই কথা সত্যি যে-
মাঝে মধ্যে বা বেশীর ভাগ সময় নিঃসহায় নিঃসম্বল একজন মানুষ মনে হয়। তখন চোখের সামনে নিজের কবিতা আর আদর্শরা বন্ধুর মত উপস্থিত হয়।
যে মানুষ টি কে জীবনের সব চেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ ভেবেছি, ভালবেসেছি, শ্রদ্ধা করেছি ;
আমি দেখেছি সেই মানুষ টা বাস্তব অর্থে মোহ মত্ত অহংকার লুব্ধ এক জন মানুষ! তার পরও যাকে আমি ঘৃণা করতে অক্ষম, ভুলে যেতে অক্ষম!

আমার মন ছুটে যেতে চায়, কাঁদতে কাঁদতে বৃষ্টিতে ভিজে সারারাত আপাদ মস্তক মাতাল হতে চায়।
চার দেয়ালে সাজানো আসবাব আর রন্ধন শৈলীর ভুরি ভোজন কে যদি সংসার বলা হয়, তবে আমি সেই সংসারে বেমানান জড়পদার্থ কেবল।

প্রতি বছর মাঘের শীতের সন্ধ্যায় আমার জন্মদিন আসে
এবার ও ব্যতিক্রম নয় । ধূমায়িত চায়ের কাপে একাকী সান্ধ্য , বাহিরে আকাশে জোছনা স্নিগ্ধ কুয়াশার ঝাঁক,
চেম্বারের কাঁচের জানালাটা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকি, মনে অনুভব করি অচিন সুদূরের ডাক।
মুঠোফোন আর ল্যাপটপের স্ক্রিনে একটু একটু পর পর বীফ শব্দে নোটিফিকেশন ভেসে উঠছে, আজব দুনিয়া!
শত একা থেকেও আমরা কেউ একা নই যেন, ইথারের বন্ধুরা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে জীবনের কথা, শুভেচ্ছা জানাচ্ছে, শুভ কামনা করছে হা-হাহাহাহা

অদ্ভুত ভাবে মনের ভেতর একটা প্রশান্তি বিচরণ করছে। আবার বুকের কোনে অবিরাম একটি যন্ত্রণা দায়ক শীষ উঠেই চলেছে;
মনে হচ্ছে কেঁদে ফেলবো, কিন্তু জানি কাঁদব না
কান্নার জন্য যেই নিকষতা দরকার সে টা আর অবশিষ্ট নাই ।
ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে জীবনটা কত সুন্দর করে গড়ে দেয়, ক্ষত গড়ে দেয়, স্মৃতি গড়ে দেয় ;
কতকিছু অজানা রয়ে যায় আবার কত কিছু জানা হয় এভাবেই তো জীবন নিজেকে বইয়ে নিয়ে যায় মহা-জীবনের পথে ।
আপন জন কে পর , আর পর কে আপন করে চিনতে চিনতে মনে মনে ভাবি জীবন কত্তো বিচিত্র! বিচিত্রতা ঘিরে আছে চার পাশ।

-দা উ দু ল ই ল লা ম।
২৫/১/১৬