মঙ্গলবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

আমি ছড়াতে পারি চৈতন্যের আলো নিত্য নতুন উদ্ভাস


 আমি ছড়াতে পারি চৈতন্যের আলো নিত্য নতুন উদ্ভাস
-------------------------------------
তোমরা যেই জীবনের সীমানা প্রাচীর নির্মাণে ব্যতি ব্যস্ত, যেই নিশ্চয়তা কিংবা রাখ ঢাকের পেছনে
সমগ্র শক্তি অপচয় করছো দিনের পর দিন-
আমি সেই সীমানা অতিক্রম করে মর্তের বন্ধন ছিন্ন করে অমৃতের ছোঁয়া পেতে আকণ্ঠ হয়েছিলাম, হয়ে আছি।
আমার কাছে আমার স্বপ্ন , আমার কবিতা , আমার নিজস্ব পৃথিবী এক মৃত্যুঞ্জয়ী অর্জন।
আমি বরাবরই আরুঢ় হয়ে মনের উন্মুক্ত পাখা মেলে অগম্যলোকের অভিসারী।
যেই অভিসারে আমি নিত্যদিন তলিয়ে যেতে দিইনি নিজেকে, গভীর থেকে গভীরে; আমার কাছে আমার ছন্দোবদ্ধ শব্দরাজীরাই এক মাত্র মূল্যবান... মহামূল্যবান সম্পদ। আমিই এর এক মাত্র অধিকারী
যার সাথে প্রতিনিয়ত আমি আমার প্রাণের সঙ্গম করে যাই।

আমার শব্দরাজীর আবেদন কে যে কেউই উপেক্ষা করতে পারে; উপেক্ষা , অবহেলা কিংবা নগণ্য ভাবার অধিকার যে কারোই রয়েছে। একিই ভাবে আমার শব্দের মর্মভেদে কবিতার অন্দর মহলে প্রবেশ করে দিতে পারে
নৈসর্গিক আলিঙ্গন। আপন করে নিতে পারে যার যেমন ইচ্ছা...।

 গ্রহণ বা নিগ্রহনের এই দু পক্ষকে আমি স্যালুট করি। সম্মান করি, তোয়াক্কা করি।
আমি সব সময় চেষ্টা করেছি নিজের দুঃখবেদনা কিংবা আনন্দ কে সীমা বেষ্টন থেকে মুক্ত করতে, বাস্তবতার নিবিড় স্পর্শ কে অনুভব করে যত প্রকার কষ্ট আছে , দুঃখ আছে ব্যর্থতা আছে অথবা সুখ- সাফল্য  সব কিছুর
মর্মস্পর্শ করে তীব্র আন্দোলিত আত্মা কে , বোধ কে বিশ্বজনীন বোধে রূপ দিতে।
যাতে মানুষ চিনতে পারে মানুষ কে।
যাতে দুঃখ বুঝতে পারে সুখের মর্ম, সুখ বুঝতে পারে দুঃখের মর্যাদা।

জীবনের প্রতিটি বাঁকে এক একটা অনুরণন থাকে। বিশ্বাস , ভালোবাসা , স্বপ্ন দিয়ে আমরা সেই অনুরণনের ভাষাকে অনুভব করতে পারি। কিন্তু অহমিকা কিংবা দাম্ভিকতার ভয়াল প্রভাবে আমরা হারিয়ে ফেলি জীবনের বোধ শক্তি। হারিয়ে ফেলি মনুষ্যত্বের চিরন্তন রূপ।
অথচ আমি সব সময় চেষ্টা করেছি নিজের চারপাশের ঘটনাগুলোকে আন্তরিক ভাবে অনুভব করে  বিশ্বাস আর ভালবাসা দিয়ে , মমতা দিয়ে আপন করে অনির্বচনীয় প্রেমের জগতে নিয়ে যেতে। যাতে মানুষ আপন পর চিনতে পারে। আলো আঁধার বুঝতে পারে।

এক জন অনন্য মানুষ কোন দিন আত্মকেন্দ্রিক হয়ে থাকতে পারে না।
পৃথিবীতে যুগে যুগে কালে কালে মহৎ আত্মার আগমন হয়েছে। এসব মহৎ আত্মার মানুষ গুলোর সংখ্যা হাতে গোনা যদিও-
কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, আজকের এই সভ্যতা এই আধুনিকতা, এই শিল্প সাহিত্য কিংবা বিত্ত ভৈবব...
যা কিছু সাধারণ মানুষ ভোগ করছে তার সব কিছুই এই হাতে গোনা মানুষদের কল্যাণে।

আমরা সাধারণ চোখে যা দেখিনা, বুঝিনা
তারা তাদের অনন্য চোখে তা দেখে - বুঝে আর ভাবতে পারছেন বলেই আমরা আজ অনেক অসম্ভব কে সম্ভব করেছি।
একবার ভাবুন পৃথিবীতে রবীন্দ্রনাথ , নজরুল, সেক্‌সপিয়ার, পাবালো নেরুদা , জালাল উদ্দিন রুমী, শেখ সাদী , ফিওদোর দস্তয়েভ্‌স্কির জন্ম না হলে কি হতো ? কোন পর্যায়ে  যেতো আজকের পৃথিবী?

আমার এক বন্ধু আমাকে একবার বলেছিলো" কবিতা ভাত পায়না"
আমি সে দিন তাকে জবাব দিয়েছিলাম "কবি'রা ভাত চিনলে মানুষ সভ্যতা ভুলে যাবে।"

নিজের সুখ ,স্বপ্ন  নিজের সাধ আহ্লাদ সব কিছু বিসর্জন দিয়ে
একজন কবি , সাহিত্যিক  অথবা একজন শিল্পী  আমাদের প্রতিদিন নতুন করে ভাবতে শেখায়। বাঁচতে শেখায়
নতুন ছন্দ নতুন স্বপ্ন নতুন জগতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয় ।
রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন " অলৌকিক আনন্দের ভার, বিধাতা যাহারে দেন, তার বক্ষে বেদনা অপার; তার নিত্য জাগরণ"।

কথাটি আমাকে বার বার সহায় দিয়েছে , আশ্রয় দিয়েছে, সাহস উৎসাহ যুগিয়েছে।
তাই যখনি অবহেলা দেখি, ঘৃণা দেখি
অহম অগ্নি চোখের দম্ভ দেখি - তখনি নিজেকে প্রবোধ দিই কবি গুরুর এই বানী দিয়ে। আর মনে মনে বলি
'তোমরা   ধ্রুপদী হও
উর্বশী হও  ভেনাস হও,তিলোত্তমায় বাঁচো
আমি আছি চির নিত্য-জাগ্রত...। হয়তো কুৎসিত বীভৎস মুখ আমার
হয়তো ভাঙ্গাচোরা গৃহে বাস
তবু আমি ছড়াতে পারি চৈতন্যের আলো নিত্য নতুন উদ্ভাস।''

দাউদুল ইসলাম