প্রিয় অরুণ সেন
চৈত্রের রোদ শাসানো সকাল কে দিয়ে গেলেন শেষ আলিঙ্গন
রক্ত রঙ্গন চোখে অনন্ত নিদ্রা জড়িয়ে চির তরে ঘুমিয়ে গেলেন
প্রিয় কবি "অরুণ সেন"
ঋতপত্রের রবীন্দ্র সংখ্যার প্রচ্ছদের মত -
সহস্র আবেদন জ্বল জ্বল করছে কবির নিষ্প্রভ অঙ্গ ,
ঠিক যেন নতুন রূপে রচিত হয়েছে 'শঙ্কায় নিনাদে শঙ্খ'!
সত্যি কি চলে গেলেন ? নাকি-
'রুদ্র গেছে রোদের বাড়ী'; যেখানে অরুণ সেন
জীবন আর কবিতার আড়াআড়ি স্বপ্ন আঁকেন!
দাউদুল ইসলাম।
২৫শে মার্চ ২০১৬
-------------------------------------
‘ঋতপত্র’সম্পাদক কবি অরুণ সেন আর নেই। শনিবার সকাল নয়টায় তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৯ বছর।
আজ খুব করে মনে পড়ছে ১৯৯৪ সালের বৃষ্টি ঝরা একটি দিনের কথা, চট্টগ্রাম জুবলী রোড়ে কবির অফিস কাম
পটো কপি মেশিনের কারবার চালাতেন, ঋতপত্রের ভক্ত ছিলাম তখন খুব; আমি গিয়েছিলাম তখনকার সময়ে আমার ভেতরকার কাব্য উন্মাদনা নিয়ে,
সে দিন ছিলো ২য় বারের মত ওখানে যাওয়া। প্রথম বার গিয়েছিলাম তারো সপ্তা-খানেক আগে, সে দিন পরিচয় আলাপের পর কবির হাতে নিজের ক'খানা ডায়েরী তুলে দিয়েছিলাম, কবিতা বলে যা লিখেছি তা আদৌ কবিতা কিনা পরখ করে দেখার জন্য, তো-
২য় বার যেদিন গেলাম সেদিন বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে কবিকে দাদা ডাকছি , খোশ গল্প করছি। এক ফাঁকে কবিতার কথা জানতে চাইলাম, দাদা যা বললও তাতে বুঝলাম উনি বেশ মনোযোগ সহকারে আমার ডায়েরী গুলো পড়েছেন।
তারপর সেই বৃষ্টি মাথায় আমায় নিয়ে ছুটলেন, জলসা সিনেমার পাশে রিক্সা থামাতে বললেন, কারেন্ট বুক ল্যান্ডের দাদাদের সঙ্গে আমার পূর্ব সখ্যতা ছিলো, কবির সাথে আমাকে দেখে কবির উদ্দেশ্যে ওনারা বলেছিল, আরে!
একে (আমাকে) কোত্থেকে আনলেন?
দাদা হাসতে হাসতে জবাব দিলো, জাত ভাই ।
সে দিন দাদা আমার হাতে ছন্দের বারান্দা, কবিতার ক্লাস, বাংলা কি লিখি কেন লিখি বই গুলো তুলে দিলেন। বললেন
মনোযোগ দিয়ে আগে এসব পড়, লিখার অনেক সময় পাবে।
তারপর বুক ল্যান্ডের চা সিঙ্গারা খেয়ে বিদায় নিলাম।
সে দিন থেকে অরুণ সেন আমার কবিতার গুরু।
কারণ যদি সেই তিনটা বই আমাকে না ধরিয়ে দিতেন তাহলে আসলেই কখনো কবিতার 'ক' বুঝতাম না।
এর পর শহরে গেলে দাদার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করতাম।
হেমসেন লেনের বাসায় নেবার জন্য এক দিন খুব জোর করলেন, কি কারণে জানি যাইনি।
তারপর নিজের ব্যস্ততা আর
জীবন সংগ্রামের এক পর্যায়ে ছিটকে পড়লাম। কিন্তু কবি অরুণ সেন কে আমি আজীবন গুরু মেনে এসেছি।
আজ তাঁর মহা প্রয়াণে আমি আমার হৃদয় নিংড়ানো প্রার্থনা করি-
স্রষ্টা যেন কবিকে শান্তিতে রাখেন।
আর কবি যেন আজীবন বেঁচে থাকেন আমাদের অন্তরে।
দাউদুল ইসলাম।
২৬মার্চ ২০১৬
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন